Tangail Saree | 'জিআই' তকমা পেয়েছে টাঙ্গাইল শাড়ি! পশ্চিমবঙ্গ না বাংলাদেশের ঐতিহ্য এই শাড়ি?

Wednesday, February 7 2024, 9:25 am
highlightKey Highlights

টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের শাড়ি দাবি করে জিআই ট্যাগ দিয়েছে ভারতের সংকৃতি মন্ত্রক। তবে এই শাড়ি বাংলাদেশের বলে দাবি করে ক্ষোভ উগ্রে দিয়েছে বাংলাদেশ। জানুন টাঙ্গাইল শাড়ির ঐতিহ্য ও উৎপত্তি সম্পর্কে।


বাংলাদেশ আর ভারত, দুই 'বন্ধু' দেশ হলেও বর্তমানে এই দুই দেশের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এক বিতর্ক। আর এই বিতর্কের কারণ শাড়ি! সম্প্রতি টাঙ্গাইল শাড়ি (Tangail Saree) পেয়েছে জিআই তকমা। তবে এই জনপ্রিয় শাড়ির উৎপত্তি ভারতে বলে দাবি করে একটি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রক। এরপরেই এই ঘটনা নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশিরা। এরপরেই শুরু হয়েছে সদ্য জিআই ট্যাগ তালিকায় (GI Tag List) জায়গা করে নেওয়া টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক।

টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের শাড়ি দাবি করে জিআই ট্যাগ দিয়েছে ভারতের সংকৃতি মন্ত্রক
টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের শাড়ি দাবি করে জিআই ট্যাগ দিয়েছে ভারতের সংকৃতি মন্ত্রক

টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে বিতর্ক :

Trending Updates

গত ১ লা ফেব্রুয়ারির পর থেকেই নেটিজেনদের মধ্যে চর্চার মূল উপাদান হয়ে ওঠে এই টাঙ্গাইল শাড়ি। বাংলাদেশি এবং ভারতীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহাকারীরা একে অপরের সঙ্গে ফেসবুক ওয়ালে বচসায় জড়িয়ে পড়ে।  সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের জিআই ট্যাগ (Gi Tag of West Bengal) তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে নদিয়া জেলাকে ঐতিহ্যশালী বস্ত্র। এই জেলাতেও টাঙ্গাইল শাড়ি তৈরি হয় এবং তা জগৎবিখ্যাত। কিন্তু, টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের জিআই ট্যাগ (Gi Tag of West Bengal) এর অন্তর্ভুক্ত করায় আপত্তি তুলেছেন বাংলাদেশিরা। তাদের বক্তব্য, এটি  বাংলাদেশের শাড়ি (Bangladesh Saree)। ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলায়। এমনটাই সর্বজনবিদিত। ফলে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রকের দাবি ঘিরে ক্ষোভ উগরে দেন বাংলাদেশিরা। টাঙ্গাইলকে এই শাড়ির উৎপত্তিস্থল হিসেবে চিহ্নিত করে জিআই ট্যাগ তালিকা (GI Tag List) এর অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও জানিয়েছেন ওপার বাংলার মানুষজন। এই প্রসঙ্গে তসলিমা নাসরিন সোশ্যাল মাধ্যমে, লেখেন ভারতকে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই অধিকার দেওয়া উচিত হয়নি। অনেকেই এই পোস্টে মন্তব্য করেছেন।

টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের জিআই ট্যাগ এর অন্তর্ভুক্ত করায় আপত্তি তুলেছেন বাংলাদেশিরা
টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের জিআই ট্যাগ এর অন্তর্ভুক্ত করায় আপত্তি তুলেছেন বাংলাদেশিরা

টাঙ্গাইল শাড়ির ঐতিহ্য ও উৎপত্তি :

টাঙ্গাইল শাড়ি (Tangail Saree) নিয়ে সম্প্রতি এই বিতর্কে এক ব্যক্তি সোশ্যাল মাধ্যমে লেখেন, টাঙ্গাইল বাংলাদেশে অবস্থিত হলেও, টাঙ্গাইল শাড়ি বোনে যে তাঁতিরা তাঁদের ৮০ শতাংশই পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছে এবং এখানেই টাঙ্গাইল শাড়ি বুনছেন। তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই ভারত এই শাড়ির জন্য জিআই রাইট দাবি করতেই পারে।' অন্যদিকে, আরেক ব্যক্তি লেখেন,  অধিকাংশ তাঁতিকেই সেই সময় এখানে চলে আসতে হয়। বাংলাদেশের জায়গাটা খ্যাত হয়েছিল ওঁদের কাজেই। ওঁরাই যখন ওখানে থাকতে পারেননি, নিজেদের সঙ্গে নিজেদের সংস্কৃতিকে এখানে নিয়ে এসেছেন তাহলে ভারতের জিআই রাইট পেতে সমস্যা কোথায়? কেউ আবার লেখেন, যদি বাংলাদেশে এখনও বিপুল পরিমাণ টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপাদন হয় তাহলে ওরা এই জিআই রাইট দাবি করতে পারে, নইলে যদি এই শাড়ি এখন কেবলই ভারতে উৎপাদন করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে এই অধিকার ভারতের পাওয়া উচিত।

 আসলে একটা সময় পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভারত বলে আলাদা কিছু ছিল না। কাঁটাতারের সীমানা ছিল না। সেই সময় ‘বাংলা’য় বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি বোনা হতো। তখন বাংলাদেশের শাড়ি (Bangladesh Saree) বা পশ্চিমবঙ্গের শাড়ি বলে আলাদা কিছু ছিল না। তবে সময়ের সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ ভাগ হয়েছে। এরপর টাঙ্গাইল নামক জায়গাটা বাংলাদেশে রয়ে গেলেও বহু তাঁতিরা সেই সময় ওপার বাংলা ছেড়ে এপারে চলে আসেন। এখানে থাকতে এবং টাঙ্গাইল শাড়ি বুনতে শুরু করেন।

টাঙ্গাইল বাংলাদেশে অবস্থিত হলেও, টাঙ্গাইল শাড়ি বোনে যে তাঁতিরা তাঁদের ৮০ শতাংশই পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছে 
টাঙ্গাইল বাংলাদেশে অবস্থিত হলেও, টাঙ্গাইল শাড়ি বোনে যে তাঁতিরা তাঁদের ৮০ শতাংশই পশ্চিমবঙ্গে চলে এসেছে 

প্রাচীন আমল থেকে বাংলাদেশের কৃষির পর গ্রামীণ অর্থনীতির সবচেয়ে বড় ভিত ছিল তাঁতশিল্প। সেই সময় সুতি কাপড় ছিল বাংলার অন্যতম রপ্তানি পণ্য। সোনারগাঁ থেকে দিল্লির সুলতানের দূত হিসেবে চীন যাওয়ার পথে 'বাংলা' থেকে উন্নত সুতিবস্ত্র এনে নানা জায়গায় বিক্রি করা হতো। তবে বাংলার নিজস্ব পোশাক তৈরির ঐতিহ্যের রক্ষাকবচে প্রথম আঘাত আসে ব্রিটিশ আমলে। সে সময় ইংল্যান্ডের ল্যাঙ্কাশায়ারের মেশিনে তৈরি কাপড়ের প্রসার ঘটে এ অঞ্চলে। তবে ১৯০৬ সালে মহাত্মা গান্ধী স্বদেশি আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশদের মেশিনে তৈরি কাপড়ের বর্জনের ডাক দিলে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলার তাঁতবস্ত্র। সে সময়টাতে পুরান ঢাকাসহ সোনারগাঁ ও আশপাশের অঞ্চল থেকে তাঁতশিল্পের প্রসার ঘটে টাঙ্গাইলসহ আরও অনেক জায়গায়।

ঐতিহাসিকভাবে টাঙ্গাইল শাড়ির তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের তাঁতিরা। পরে এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হন মুসলিমরাও। এদিকে বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় টাঙ্গাইলের ছেলেরা পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে লুঙ্গি-গামছা এবং মেয়েরা শাড়ি পরিধান করে, যা টাঙ্গাইল শাড়ি হিসেবে পরিচিত হয়েছে। টাঙ্গাইল অঞ্চলটি যখন থেকে গড়ে ওঠে তখনই এ শাড়ি তৈরি শুরু হয়।

ঐতিহাসিকভাবে টাঙ্গাইল শাড়ির তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের তাঁতিরা
ঐতিহাসিকভাবে টাঙ্গাইল শাড়ির তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের তাঁতিরা

তবে সম্প্রতি ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রক শাড়িটির জিআই ট্যাগ হিসেবে বলেন, শান্তিপুর ডিজাইন ও ঢাকাই টাঙ্গাইলের সংমিশ্রণে এক ধরনের সংকর শাড়ি টাঙ্গাইল। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভারতেই সেটি তৈরি হয়েছে। তাই উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গ এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে ভারতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনে। একই সঙ্গে এ রেজিস্ট্রেশনের বৈধতা ২০৩০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে বলে স্বীকৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে নানান তর্ক-বিতর্ক।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File